ইচ্ছেঘুড়ি - জাহানারা পারভীন
ইচ্ছেঘুড়ি, কতবার তুমি উড়েছ স্বেচ্ছায়?
গাংচিলের ডানার সমান্তরালে কতবার পেয়েছ মেঘমুক্ত আকাশ।
তুমি কি সেই বকের সহপাঠী, মাছের ধ্যানে একপায়ে
দাঁড়িয়ে থাকা শাপলাবিলে; সেই দুপুরের মিত্র,
দূরের কয়লাখনি থেকে যার পত্র এসেছে;
মৃত সেই রেশম পোকা, যার অভিশাপ লেগে আছে সিল্কের জামায়?
সেদ্ধ শালুকের বুক, কালচে খোসার আড়ালে হলুদ ঘুম!
খসখসে বাকলের নিচে কাঠের উজ্জ্বল, মসৃণ হাসি,
পাকা ফসলের মাঠ, অগভীর দিঘি বা নদীর জলে ছায়া ফেলে
খুব নিচু দিয়ে উড়েছ কখনো, অথবা ছায়া পড়ে না এমন উচ্চতায়,
ঈগলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, দীর্ঘ সারিতে ওড়া শীত পাখিদের
কালো রেখার পিছু পিছু গ্রাম পেরিয়ে ঢুকেছ নগরে?
দেখেছ বহুতল ছাদে ডানা মেলে দাঁড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ এন্টেনা
পরিত্যক্ত জুতায় বাসা বাঁধা ইঁদুরের সংসার?
বাতাসে সিসার ঘনত্বে নিয়েছ নিঃশ্বাস!
নৌকাবাইচের বৈঠার আঘাতে কুঁকড়ে যাওয়া জলের আর্তি
এখনো কি আছে মনে, মরুভূমির নিচে চাপা পড়া
প্রত্ননগরের ঘুম। বালির স্লেটে উটের সঙ্গে লেখা সে নাম?
অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া ভবনের ওপর দিয়ে উড়তে গিয়ে
পাখিদের সঙ্গে খুইয়েছ লেজের ভগ্নাংশ,
পোড়া লেজ নিয়ে বালকের হাতে ধরা পড়ে তার হাতের ইশারায়
নাচতে নাচতে এখনো কি আটকে আছো বৈদ্যুতিক খুঁটিতে!
Comments (0)
Leave a reply