এখন - তারাপদ রায়

মনে নেই,
আমি নিজে ফিরে গিয়েছিলাম,
অথবা তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, এখন আর কিছু মনে নেই, তবু
দুঃখ হয় এখন, যখন একেকদিন খুব বৃষ্টি নেমে আসে
এখন, যখন একেকদিন খুব শীতের বাতাস শুধু পাতা উড়িয়ে উড়িয়ে
আমার চারদিকে বৃষ্টি ও ঠান্ডা বাতাস ঘুরে ঘুরে;
এমন কি যখন সেই পুরনো কালের সাদা রোদ হঠাত্ ভোরবেলা ঘর
ভাসিয়ে ছাপিয়ে,
'কি ব্যাপার এবার কোথাও যাবে না?'
এখন আর কোনোখানে যাওয়া নেই, এখন কেবল ঠান্ডা বাতাস, এখন
বৃষ্টি, জল আমার চারপাশ ঘিরে পাতা ওড়ে আর জল পড়ে ।
এখন তোমার জন্য দুঃখ হয়,
এখন আমার জন্য দুঃখ হয়,
আমি নিজে ফিরে গিয়েছিলাম
অথবা তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, এখন দুঃখ হয় ।

আমার কী এসে যাবে ~ হেলাল হাফিজ

আমি কি নিজেই কোন দূর দ্বীপবাসী এক আলাদা মানুষ?
নাকি বাধ্যতামূলক আজ আমার প্রস্থান,
তবে কি বিজয়ী হবে সভ্যতার অশ্লীল স্লোগান?

আমি তো গিয়েছি জেনে প্রণয়ের দারুণ আকালে
নীল নীল বনভূমি ভেতরে জন্মালে
কেউ কেউ চলে যায়, চলে যেতে হয়
অবলীলাক্রমে কেউ বেছে নেয় পৃথক প্লাবন,
কেউ কেউ এইভাবে চলে যায় বুকে নিয়ে ব্যাকুল আগুন।

আমার কী এসে যাবে, কিছু মৌল ব্যবধান ভালোবেসে
জীবন উড়ালে একা প্রিয়তম দ্বীপের উদ্দেশ্যে।

নষ্ট লগ্ন গেলে তুমিই তো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
সুকঠিন কংক্রিটে জীবনের বাকি পথ হেঁটে যেতে যেতে
বারবার থেমে যাবে জানি
‘আমি' ভেবে একে-তাকে দেখে।
তুমিই তো অসময়ে অন্ধকারে
অন্তরের আরতির ঘৃতের আগুনে পুড়বে নির্জনে।

আমাকে পাবে না খুঁজে, কেঁদে-কেটে, মামুলী ফাল্‌গুনে।

রবীন্দ্রনাথ তোমার কবিতা উয়িদড্র করো - রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

রবীন্দ্রনাথ তোমার কবিতা তুমি
ফিরিয়ে নাও।
বড্ড বেশি মিথ্যে কথা ফেলেছো লিখে
তোমার কবিতা তুমি ফিরিয়ে নাও।

মানস সুন্দরী বলে কাউকে তো
দেখি না কোথাও কোনো খানে…
ওরা মানস সুন্দরী নয়-ওরা ফানুস
ভালবাস নয় ওরা কসমেটিকসের
জঘন্যতম পুজারী
ও কবিতা ফিরিয়ে নাও রবীন্দ্রনাথ।

যেতে নাহি দেবো বলে না তো কেউ
ঘৃনার নৃশংস কন্ঠে বলছে সবাই
যেথা পারো চলে যাও যেথা খুশি।
সোনার খাটে ঘুমাচ্ছে রাজারকুমার ঘুমোক-
তুমি তোমার কবিতা ফিরিয়ে নাও।

কাকে তুমি বলেছো সন্ধার মেঘমালা
ও তো সাপ উদ্যত বিষাক্ত ফনা,
কোন বিশ্বাসে ওকে ছোঁবো
কি বিশ্বাসে রাখবো ওকে বুকের সিন্দুকে
কোন অপভ্রমে চোখে ওর রাখবো চোখ
ও তো চোখ নয় ওটা এক সুরম্য ফাঁদ।
কবিতাগুলো ফিরিয়ে নাও রবীন্দ্রনাথ
যন্ত্রনার নরকে হচ্ছি নিঃশেষ
ক্ষুধার্ত মাটিতে তোমার কবিতাগুলো
বড়ো অবাস্তব।

আজ থেকে ওসব বাতিল- সব বাতিল
এই তুমুল ঘোষনা ঘোষিত হলো।

চেয়ে দ্যাখো এ চোখে স্বপ্ন নেই
কোন কল্পনার শিশুগাছ হচ্ছে না বড়ো
দেখো কোন প্রেম নেই হতাশা ছাড়া
এ দুটি চোখ শুধু সাক্ষী হয়ে আছে।

রবীন্দ্রনাথ তোমার কবিতা ফিরিয়ে নাও
নয়তো গাঁজার আসরে তোমাকেসহ
তোমার সমগ্র রচনাবলীকে
জঘন্যভাবে হত্যা করবো।

সেই মানবীর কন্ঠ ~ আবুল হাসান

প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম -কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরণ দাহ, হয়েছি বিজন ব্যথা, হয়েছি আগুন !
আমি এ আঁধার স্পর্শ করে কেন তাকে বলেছি হৃদয়,
তৃষ্ণায় তাড়িত তবু কেন তাকে বলেছি ভিক্ষুক
আমি এ জলের পাত্রে জল চাই না, বিষ চাই বিষও তো পানীয় !
প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম, কেন আমি
এ বুক স্পর্শ করে বলেছি একদিন গ্রীস, কলহাস্য, অদিতি উৎসব !
আমি তাম্রলিপি আমি হরপ্পার যুগল মূর্তির কার কে ?
কী আমার অনুভূতি ? কোনোদিন কোনোই নারীকে
কেন আমি বলিনি মাতৃত্ব ? কেন বলেছি নির্জন ?
প্রিয়তম পাতাগুলি ঝরে যাবে মনেও রাখবে না
আমি কে ছিলাম, কী ছিলাম, সঙ্ঘমিত্রা নাকি সে সুদূর
সভ্যতাসন্ধির রাণী, অন্য কোনো অশোকের বোন,
হয়েছি এখন আমি কেন বা এমন প্রবাহিত ?

কুলি-মজুর -- কাজী নজরুল ইসলাম

দেখিনু সেদিন রেলে,
কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিলে নীচে ফেলে!
চোখ ফেটে এল জল,
এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
যে দধীচিদের হাড় দিয়ে ঐ বাষ্প-শকট চলে,
বাবু সা’ব এসে চড়িল তাহাতে, কুলিরা পড়িল তলে।
বেতন দিয়াছ?-চুপ রও যত মিথ্যাবাদীর দল!
কত পাই দিয়ে কুলিদের তুই কত ক্রোর পেলি বল্‌?
রাজপথে তব চলিছে মোটর, সাগরে জাহাজ চলে,
রেলপথে চলে বাষ্প-শকট, দেশ ছেয়ে গেল কলে,
বল ত এসব কাহাদের দান! তোমার অট্টালিকা
কার খুনে রাঙা?-ঠুলি খুলে দেখ, প্রতি হঁটে আছে লিখা।
তুমি জান না ক’, কিন- পথের প্রতি ধূলিকণা জানে,
ঐ পথ, ঐ জাহাজ, শকট, অট্টালিকার মানে!
আসিতেছে শুভদিন,
দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ!
হাতুড়ি শাবল গাঁইতি চালায়ে ভাঙিল যারা পাহাড়,
পাহাড়-কাটা সে পথের দু’পাশে পড়িয়াযাদের হাড়,
তোমারে সেবিতে হইল যাহারা মজুর, মুটেও কুলি,
তোমারে বহিতে যারা পবিত্র অঙ্গে লাগাল ধূলি;
তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান,
তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান!
তুমি শুয়ে র’বে তেতালার পরে আমরা রহিব নীচে,
অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে ভরসা আজ মিছে!
সিক্ত যাদের সারা দেহ-মন মাটির মমতা-রসে
এই ধরণীর তরণীর হাল রবে তাহাদেরি বশে!
তারি পদরজ অঞ্জলি করি’ মাথায় লইব তুলি’,
সকলের সাথে পথে চলি’ যার পায়ে লাগিয়াছে ধূলি!
আজ নিখিলের বেদনা -আর্ত পীড়িতের মাখি’ খুন,
লালে লাল হ’য়ে উদিছে নবীন প্রভাতের নবারুণ!
আজ হৃদয়ের জমা-ধরা যত কবাট ভাঙিয়া দাও,
রং-করা ঐ চামড়ার যত আবরণ খুলে নাও!
আকাশের আজ যত বায়ু আছে হইয়া জমাট নীল,
মাতামাতি ক’রে ঢুকুক্‌ এ বুকে, খুলে দাও যত খিল!
সকল আকাশ ভাঙিয়া পড়-ক আমাদের এই ঘরে,
মোদের মাথায় চন্দ্র সূর্য তারারা পড়-ক ঝ’রে।
সকল কালের সকল দেশের সকল মানুষ আসি’
এক মোহনায় দাঁড়াইয়া শোনো এক মিলনের বাঁশী।
একজনে দিলে ব্যথা-
সমান হইয়া বাজে সে বেদনা সকলের বুকেহেথা।
একের অসম্মান
নিখিল মানব-জাতির লজ্জা-সকলের অপমান!
মহা-মানবের মহা-বেদনার আজি মহা-উত্থান,
উর্ধ্বে হাসিছে ভগবান, নীচে কাঁপিতেছে শয়তান!

শেষ পাখীর ডাক -কৃষ্ণেন্দু বন্দোপাধ্যায়

একটা ডাক শুনি,
সারাদিনের শেষে সন্ধ্যা নামে, দিন আজও উজ্জ্বলরাত নিকষ.....
ভোরের বেলায় পাখির ডাক কালকেও তো শুনেছি, কিন্তু আজ?
কোথায় সেসব ঘুম ভাঙ্গানো কলতান?
অদল বদল বড্ড জটিল,
কিছুতেই বাধ মেনে না,তবু বাস পাতার ফাঁকের চাই পাখিটা, কোথায়?
নাই?
কেন?
দূষিত ঐ কালো সমাজের ছোঁয়ায় , সে কি মারা গেছে??
চির বিলুপ্ত?
না না! এটা মিথ্যা কথা,
ওকে আমি বা তুমি ফেরাতে পারবো না,
জানি, তবু মুখে শান্তনা,
এর বড় বড় কথা,
পাখির আর্তনাদে ভেঙ্গে যাওওয়া স্বাপ্ন, আজ সেটুকুও হারিয়ে গেছে পাখি বললে শিশুরা শুধু কাকের দিকে আঙ্গুল তোলে, আর কিছু ছিল শকুন,নববর্ষের শুরুতে শুধুই তাদের আক্রোশ, তাদের দুষ্কৃতী, না না,
এমা,ছি!
বলো, দুর্বার গতিতে এগিয়ে আসা প্রযুক্তি, নাকি কিছু হাতেগোনা মানুষ, যারা মুষ্টি লুকিয়ে রাখে ক্ষমতা, চারিদিকে এতো শেয়ালের ডাক' উঁহু!
কোথায় ডুবিয়ে দিছে সেই বাঁশ বনের, সেই দোয়েল এর গান,কেউ কী পারবে তাকে ফিরিয়ে দিতে'? জবাব আসে: নাআসেই স্বাপ্ন, দুস্বাপ্ন ছেড়ে বোকা পাখি আজ বাস্তববাদী দের হাতেই চূর্ণ! বিচূর্ণ!
কেন??
জানতে চাইবো না,
কারণ, কেউ তো শোনাবো না সেই শেষ পাখীর ডাক।

কথা আছে - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

বহুক্ষণ মুখোমুখি চুপচাপ, একবার চোখ তুলে সেতু
আবার আলাদা দৃষ্টি, টেবিলে রয়েছে শুয়ে
পুরোনো পত্রিকা
প্যান্টের নিচে চটি, ওপাশে শাড়ির পাড়ে
দুটি পা-ই ঢাকা
এপাশে বোতাম খোলা বুক, একদিন না-কামানো দাড়ি
ওপাশে এলো খোঁপা, ব্লাউজের নীচে কিছু
মসৃণ নগ্নতা
বাইরে পায়ের শব্দ, দূরে কাছে কারা যায়
কারা ফিরে আসে
বাতাস আসেনি আজ, রোদ গেছে বিদেশ ভ্রমণে।
আপাতত প্রকৃতির অনুকারী ওরা দুই মানুষ-মানুষী
দু‘খানি চেয়ারে স্তব্ধ, একজন জ্বলে সিগারেট
অন্যজন ঠোঁটে থেকে হাসিটুকু মুছেও মোছে না
আঙুলে চিকচিকে আংটি, চুলের কিনারে একটু ঘুম
ফের চোখ তুলে কিছু স্তব্ধতার বিনিময়,
সময় ভিখারী হয়ে ঘোরে
অথচ সময়ই জানে, কথা আছে, ঢের কথা আছে।

দুঃখ করো না, বাঁচো - নির্মলেন্দু গুণ

দুঃখকে স্বীকার করো না, –সর্বনাশ
হয়ে যাবে ।
দুঃখ করো না, বাঁচো, প্রাণ ভ’রে বাঁচো ।
বাঁচার আনন্দে বাঁচো । বাঁচো,
বাঁচো এবং বাঁচো ।

জানি মাঝে-মাঝেই তোমার দিকে হাত
বাড়ায় দুঃখ,
তার কালো লোমশ হাত প্রায়ই তোমার বুক
ভেদ করে
চলে যেতে চায়, তা যাক, তোমার বক্ষ
যদি দুঃখের
নখরাঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়; যদি গলগল
করে রক্ত ঝরে,
তবু দুঃখের হাতকে তুমি প্রশ্রয় দিও
না মুহূর্তের তরে ।
তার সাথে করমর্দন করো না,
তাকে প্রত্যাখান করো ।

অনুশোচনা হচ্ছে পাপ, দুঃখের এক নিপুণ
ছদ্মবেশ ।
তোমাকে বাঁচাতে পারে আনন্দ । তুমি তার
হাত ধরো,
তার হাত ধরে নাচো, গাও, বাঁচো,
ফুর্তি করো ।
দুঃখকে স্বীকার করো না, মরে যাবে, ঠিকমরে যাবে ।

যদি মরতেই হয় আনন্দের হাত ধ’রে মরো ।
বলো, দুঃখ নয়, আনন্দের মধ্যেই আমার জন্ম,
আনন্দের মধ্যেই আমার মৃত্যু, আমার অবসান

যখন বৃষ্টি নামলো - শক্তি চট্টোপাধ্যায়

বুকের মধ্যে বৃষ্টি নামে, নৌকা টলোমলো
কূল ছেড়ে আজ অকূলে যাই এমনও সম্বলও
নেই নিকটে - হয়তো ছিলো বৃষ্টি আসার
আগে
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি, তাই কি মনে জাগে
পোড়োবাড়ির স্মৃতি? আমার স্বপ্নে-
মেশা দিন ?
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি,চলচ্ছক্তিহীন।

বৃষ্টি নামলো যখন আমি উঠোন-পানে একা
দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাব
দেখা
হয়ত মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলিগাছের তলে
আজানুকেশ ভিজিয়ে নিচ্ছো আকাশ-
ছেঁচা জলে
কিন্তু তুমি নেই বাহিরে - অন্তরে মেঘ করে
ভারী ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে!.

সেই গল্পটা - পূর্ণেন্দু পত্রী

আমার সেই গল্পটা এখনো শেষ হয়নি
শোন,পাহাড়টা, আগেই বলেছি ভালোবেসেছিল মেঘকে
আর মেঘ কিভাবে শুকনো খটখটে পাহাড়টাকে
বানিয়ে ফেলেছিল ছাব্বিশ বছরের ছোকড়া।
সে তো আগেই শুনেছো
সেদিন ছিল পাহাড়টার জন্মদিন
পাহাড় মেঘকে বলল, আজ তুমি লাল শাড়ি পড়ে আসবে
মেঘ পাহাড়কে বলল, আজ তোমাকে স্নান করিয়ে দেব চন্দন জলে
ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরোম নদী
পুরুষরা জ্বলন্ত কাঠ।
সেইভাবেই সেইভাবেই মেঘ ছিল পাহাড়ের আলিঙ্গনের আগুনে
পাহাড় ছিল মেঘের ঢেউ জলে
হঠাৎ আকাশ জুড়ে বেজে উঠল ঝড়ের যত ঝম্ফ
ঝাকড়া চুল উড়িয়ে ছিনতাইয়ের হুমকিতে ছুটে এল এক ঝাঁক হাওয়া
মেঘের আঁচলে টান মেরে বলল
ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে।
এখনও শেষ হয়নি গল্পটা
বজ্রের সঙ্গে মেঘের বিয়ে হয়ে গেল ঠিকই
কিন্তু পাহাড়কে সে কোনদিনই ভুলতে পারলো না
বিশ্বাস না হয়তো চিড়ে দেখতে পারো পাহাড়টার হাড়-পাজর
ভেতরে থৈ থৈ করছে শত ঝরনার জল।

আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায় - সৈয়দ শামসুল হক

আজ আমি যাব সেখানে,
দিগন্তের শেষ সীমান্তে,
অস্তমিত রবির শেষ আভা
ছোঁয়াবে যেখানে ঠিক সেখানে,
আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায়।
গোধূলির লাল টিপ কপালে পরে,
কুয়াশার সাদা চাঁদর গায়ে জড়িয়ে,
বাতাসের দুরন্তপনার কাজল
দৃষ্টির তেপান্তরে এঁকে,
আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায়।
গুচ্ছ পাতার মত বুনন করে
কথামালা উপহার দেব বলে,
সন্ধ্যা প্রদীপের আলোর মত,
মিষ্টি আলো তোমার
মনে ছড়াবো বলে,
আমি থাকবো তোমার অপেক্ষায়।।
যেখানে আছি আমি তোমার
অপেক্ষায়,
প্রকৃতির আদল অঙ্গে মেখে,
তোমার জন্য অতি সাধারণ সাজ-
সজ্জায়,
এই গোধূলি বেলায়…
একটু উষ্ণ ভালবাসা দেবার
একাগ্রতায়,
ঠিক সেখানটায়,
আসবে কি তুমি ?
এই অবেলায়…!

যাতায়াত- হেলাল হাফিজ

কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো ।

কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানেনা ।

নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম
পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পখিক
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও,
কেউ বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো
যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি
মাথার কসম আবার এসো ।

জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো
শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,
চৈত্রাগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি
বললো না কেউ তরুণ তাপস এই নে চারু শীতল কলস ।

লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম ।

ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়

আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই
দুঃসময়ে এতোটা পথ একলা এলাম শুশ্রূষাহীন ।
কেউ ডাকেনি তবু এলাম,বলতে এলাম ভালোবাসি ।