কদমতলার প্রার্থনা - জাহানারা পারভীন
মাঠের মাঝামাঝি একটি কবর
কদমের ছায়ায় অপেক্ষায় থাকে
জীবিত স্বজন এসে তুলবে প্রার্থনার হাত
বাতাস ও বৃষ্টিরাও যোগ দেবে তাতে
অদ্ভুত স্বস্তির যৌথ মোনাজাত
সমগ্র ছায়া মাটিতে পড়ে ভেঙে ভেঙে যায়
ঘাসের ফাঁকে পড়ে থাকে রোদ ও ছায়ার ইশারা
আলো-ছায়ার ভগ্নাংশে পড়ে থাকা ধান খুঁটে খেতে
খেতে আবাসিক চড়–ই ঠুকরে দেয় রোদের আলো
কখনো কখনো ছায়াকেও। জলে ভাসা খড়কুটোকেও
যেমন ঠুকরে দেয় ক্ষুধার্ত মাছ, খাদ্যের ভ্রমে।
নিজেকে এই আলো-ছায়ার শুভার্থী ভাবি,
সেখানে খুঁজি বহুকাল আগের বিচ্ছিন্ন মুখ
দেশভাগের শিকার মানুষ যেমন নতুন মানচিত্রে
করে ফেলে আসা শেকড়ের সন্ধান
কবরের ধার ঘেঁষে
পায়ে চলা পথ
গেছে গ্রামের দিকে
ও গ্রাম তুমিও কি বৃদ্ধাশ্রমে থাকো?
কবরের অধিবাসীর মতো অপেক্ষায়
পরবাসী সন্ততির?
দূরবর্তী বিমান,
পাখির উড়াল
দূর পথিকের হেঁটে আসা দেখলেই
মনে হয়-- প্রতীক্ষার বুঝি শেষ!
বৃদ্ধাশ্রমের সহযোদ্ধারা জানেন,
বিশেষ দিনেও তার কোনো সাক্ষাৎপ্রার্থী ছিল না।
প্রবল শীতেও ছিল না, ফোন বা চিঠির উষ্ণতা।
ছিল একটি ছবি, রুপার ফ্রেমে বাঁধানো,
চোখের জলে ভেজা, পারিবারিক।
অশ্রুর দাগ বুকে নিয়ে ছবিটিও প্রতীক্ষমাণ
একটি ছায়ার।
দীর্ঘ সে ছায়াটি
আজো আসেনি,
না আশ্রম
না কদমতলায়।
Comments (0)
Leave a reply